জেলা প্রশাসনের ১৫ দফা সুপারিশ

রোহিঙ্গারা পাবেন কেবল চাল-ডাল সহ খাদ্য

বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে রোহিঙ্গা বিষয়ে ১৫ দফার একটি সুপারিশ মালা পাঠিয়েছে। গত ক’দিন ধরে রোহিঙ্গা শিবির সহ রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অস্থির পরিস্থিতির মুখে জেলা প্রশাসন সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫ দফার এই সুপারিশ মালাটি প্রেরণ করে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরো যাতে ক্রমশ অবনতির দিকে মোড় নিতে না পারে সে বিষয়েই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এসব সুপারিশ পাঠানোর কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে পাঠানো এসব সুপারিশে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে বসানো কয়েক হাজার দোকান এবং হাট-বাজারগুলোর ব্যবস্থাপনা সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী চালানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে এসব হাট-বাজার অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে। তদুপরি এসব হাটাবাজার থেকেই রোহিঙ্গারা যাবতীয় অপরাধ কাজ শুরু করে থাকে।

রোহিঙ্গা শিবিরগুলো বর্তমানে বিকাল ৪ টার পর থেকে পরের দিন সকাল ৯ টা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কেননা সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত অফিস খোলা থাকে শিবিরে। এসময়ের পর শিবিরের অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তা এবং আইন শৃংখলা বাহিনীরও কোন সদস্য থাকে না। এমন সুযোগে শিবির অভ্যন্তরে উগ্রপন্থা সহ সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়ার দীর্ঘ সময় হাতে পায় রোহিঙ্গারা। তাই অবিলম্বে শিবিরের অভ্যন্তরে ক্যাম্প ইনচার্জ সহ আইন শৃংখলায় নিয়োজিত সদস্যদের দিবারাত্রি অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
শিবির অভ্যন্তরে গত ২৫ আগষ্ট যেভাবে লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ করে এক প্রকারের আতংক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এমন সুযোগ আর দেওয়া হবেনা। মানবতার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই দেখা হবে। শিবিরে আশ্রয় নিয়ে বিদেশী সংস্থা এবং কোন এনজিওর টাকা নিয়ে তেমন সভা-সমাবেশ রোহিঙ্গাদের করার কোন সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।

রোহিঙ্গাদের মাঝে আর কোনভাবেই নন ফুড আইটেমের পণ্য-সামগ্রী সরবরাহ দেয়ার সুযোগ দেয়া হবেনা। এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বলেন, গত দুই বছর ধরেই রোহিঙ্গাদের মাথায় দেয়ার জন্য নানা কম্পানীর নারিকেল তেল ছাড়াও সুগন্ধি তেল সরবরাহ দিয়ে আসছিল। সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল দা, কুড়াল, খন্তি, এমনকি হারপিক, স্যাভলন, সাবান, দাঁত মাজার ব্রাশ, টুথপেষ্ট, সোœা-পাউডার থেকে শুরু করে নারীদের রং ফর্সা করতে ‘ফেয়ার এন্ড লাভলি’ পর্যন্ত এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহ দিয়ে আসছিল। আর এসব পণ্য সামগ্রী পেয়েই রোহিঙ্গারা রাস্তার ধারে দোকান সাঁজিয়ে এসব বিক্রির জন্য বসে পড়ে। তিনি জানান, এসব আর সরবরাহের সুযোগ থাকছে না। এখন থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার যথা চাল, ডাল, লবণ ইত্যাদি সরবরাহ দেয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের মাঝে এনজিওগুলো নানা রকমের প্রকল্প নিয়ে নগদ টাকা বিতরণের সুযোগও নিয়েছিল এতদিন ধরে। এতে করে রোহিঙ্গারা ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি বিপুল অংকের নগদ টাকার মালিক হয়ে যাবারও সুযোগ পেয়েছে। এমনকি দেশের পল্লী এলাকায় সরকারের অতি দরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেয়া জনপ্রিয় প্রকল্পগুলোর আদলে নগদ টাকা প্রদানের কর্মসুচিও চালু রেখেছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জানান, নগদ টাকা বিতরণের কর্মসুচিও বাদ যাবে এখন থেকে।

রোহিঙ্গারা বর্তমানে শিবির ছেড়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যেতে পারে। এরকম সুযোগ বন্ধ করতে শিবিরগুলোর চারিদিকে কাঁটাতারের ঘেরা দেয়ারও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এসব ছাড়াও রোহিঙ্গাদের এনজিওতে চাকরি করার কোন সুযোগও রাখা হবে না। তাদের দোকার পাট এবং কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করারও কোন অনুমতি দেয়ার সুযোগ থাকবে না সহ আরো অনেক সুপারিশ বাস্তবায়ন করা গেলে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এমনিতেই শান্তি ফিরে আসবে-বলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।